ঢাকা, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): আজ রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তৃতীয় আইওরা সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন’র (ব্লু ইকনমি মিনিস্টেরিয়াল কনফারেন্স) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইওরা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সমুদ্রের তলদেশের অনাবিস্কৃত সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে এই অঞ্চলে একটি অভিন্ন টেকসই সমুদ্র অর্থনৈতিক বেষ্টনী গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্র অর্থনীতিকে সামনে রেখে সমুদ্রে অব্যবহৃত ও এর তলদেশে অ-উন্মোচিত সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে এই অঞ্চলে যার যার টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করার সুযোগ রয়েছে।’‘সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি,’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একীভূত টেকসই সমুদ্র অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুফল পেতে অংশীজনদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই। ‘আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাই এ সম্মেলনেই যেন আমরা সম্মিলিতভাবে সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৪ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারি।’
শান্তি, নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘ খেয়াল রাখতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে গিয়ে যেন সমুদ্রের সুস্থ পরিবেশ বিঘিœত না হয়।’‘তাই আমাদের সমুদ্র অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি সমুদ্র চিন্তাও করতে হবে এবং সে লক্ষ্যে সমন্বিত, লাভজনক ও সর্বোপরি সমুদ্র সংরক্ষণমূলক নীতি নির্ধারণ ও সে অনুযায়ী কর্মকা- পরিচালনা করতে হবে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর তবেই ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৯ বিলিয়ন মানুষের জীবন ধারণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এই সমুদ্র অর্থনীতিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।’ আইওরা মেরিটাইম সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সহায়তা, মৎস্য ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ঝুঁঁকি ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহায়তা, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সর্বোপরি সমুদ্র অর্থনীতির সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। তথাপি, নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আমরা কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। আপনারা ইতোমধ্যেই আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমুদ্র শাসন, সম্পদ উন্মোচন ও আহরণের টেকসই পদ্ধতি, নৌপরিবহন, পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপনসহ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আইওরা সদস্যদের মধ্যে যে কর্মতৎপরতা ও উদ্যম সৃষ্টি হয়েছে তা নিকট ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় অনুষ্ঠিত আইওরা লিডার্স সামিটে অংশগ্রহণের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন,‘সেখানে আমরা আইওরা’র নেতৃত্বে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে কাজ করার এবং সমুদ্রযান চলাচলের স্বাধীনতায় সম্মান দেখানোর অঙ্গীকার করেছিলাম।’ বাংলাদেশ আগামী ১লা অক্টোবর দু’বছরের জন্য আইওরা’র সহ-সভাপতি এবং ১লা অক্টোবর ২০২১ পরবর্তী দু’বছরের জন্য সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
এই গুরুদায়িত্ব পালনে তিনি সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেন, ‘সমুদ্র অর্থনীতির বিকাশ ও উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে এবং সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র সম্পদের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম ‘সমুদ্র অঞ্চলের সীমা নির্ধারণ, সমুদ্র সীমানায় বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনা ও সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য ‘দি টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স এন্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। এই আইনটি জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষণার আট বছর পূর্বেই বাংলাদেশে কার্যকর করা হয়। যখন আন্তর্জাতিক পরিম-লে এ সম্পর্কে ততটা ধারণাই ছিল না।
সরকার প্রধান বলেন, সমুদ্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা শিল্পগুলো যেমন- পণ্য পরিবহন, মৎস্য শিল্প, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ, নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, সমুদ্র বন্দর, পর্যটন, মেরিন জেনেটিক রিসোর্সেস, মেরিন বায়োটেকনোলজি ইত্যাদি বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহণের ৬০ শতাংশ এই সাগর-মহাসাগর দিয়েই হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে সমুদ্র বাণিজ্যের পরিমাণ ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
সম্মেলন শেষে ‘ঢাকা ঘোষণা’ এবং সম্মেলনে প্রাপ্ত অন্যান্য নথির মাধমে আইওরা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ব্লু ইকোমনমিকে আরো জোরদার করার অঙ্গীকার প্রতিভাত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দি ইন্টারগভার্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন (আইওরা-আইওআরএ) ১৯৯৭ সালে ভারত মহাসাগর তীরবর্তী ২১ দেশ নিয়ে গঠিত হয়। সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- অষ্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কমরস, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মাদাগাসকার, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মোজাম্বিক, ওমান, সিশেলস, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা,শ্রীলংকা,তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন।
জাপান, জার্মানি, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং মিশর আইওরা’র ডায়ালগ পার্টনার।
Leave a Reply